চার সেকেন্ডে এক মৃত্যু
বিশেষজ্ঞগণ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বিশ্ববাসি। গত আড়াই বছর ধরে মহামারির ফলে অর্থনৈতিক টানাটানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দেশে দেশে সশস্ত্র সংঘর্ষ বেড়ে চলার ফলে মানুষ ক্ষুধার কবলে পড়েছে। তাছাড়া,২০১৫ সালে জাতিসংঘ সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিল যে, ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে খাদ্য পরিস্থিতি জটিল হবে। সাম্প্রতিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচক জানাচ্ছে যে, ‘ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই বিপজ্জনকভাবে পথভ্রষ্ট’ হয়ে পড়েছে। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। আর বিশ্বজুড়ে ৪৫টি দেশের পাঁচ কোটি মানুষ অনাহারের দ্বারপ্রান্তে’। বিশ্বে চরম ক্ষুধা নিয়ে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ১৯ হাজার ৭০০ মানুষের। সেই হিসাবে, প্রতি চার সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে বিশ্বে। সেই সঙ্গে অপুষ্টি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জানা গেছে, গত বছর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া মানুষের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে বেড়েছে ৩২ কোটি। আর বর্তমানে প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের সমান। সাধারণত খাবারের গুণগত মান, শিশুদের বিকাশ ও শিশুমৃত্যুর হার থেকে বোঝা যায় অপুষ্টি ঠিক কতোটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে শিশুদের মানসিক, শারীরিক ও চিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে’। এই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের ৫০টি দেশের একটা বড় অংশের মানুষের জন্য অপুষ্টি ও খাদ্য সংকট অন্যতম বড় সমস্যা। এছাড়া, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে খাদ্য সংকটের বর্তমান চিত্র;এমনটাই বলছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বিশ্বব্যাপি খাদ্য উৎপাদন যেখানে বেড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে আমরা খাদ্য সংকটে ভুগছি। দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, দারিদ্র্য, সামাজিক অবিচার, লিঙ্গ বৈষম্য, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি সবকিছু মিলে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধাকে ভয়াবহ করেছে। তাই সম্মিলিত শক্তি ও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে সংকট মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিটি সরকারকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন