বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জানাজায় লাখো মানুষের ঢল
হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আর নেই


 সিলেটের ডাক  প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২১, ৩:০৮:৫০ অপরাহ্ন
<span style='color:#000;font-size:18px;'>জানাজায় লাখো মানুষের ঢল</span><br/> হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী আর নেই

ডাক ডেস্ক : দেশের শীর্ষ আলেম, হেফাজতে ইসলামের আমির এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের পর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইমামতি করেন তার মামা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম সহ লক্ষাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মাদ্রাসার ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভিড়ের কারণে লাশ বহনকারী কফিন মাদ্রাসা মাঠ থেকে স্থানীয় ডাকবাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই নামাজে জানাজা পরিচালিত হয়।
এর আগে তার দাফন গ্রামের বাড়িতে নাকি হাটহাজারী মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। পরে বৈঠক করে গ্রামের বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এর আগে দাফনের কথা ছিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। ওই সময়ে হেফাজতের নায়েবে আমির সালাউদ্দিন নানুপুরী জানিয়েছিলেন, হেফাজতের সাবেক আমির মরহুম আল্লামা শফিকে যে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল সেখানেই দাফন করা হবে বাবুনগরীকে।
প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল লাশ দাফন করা হবে ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রামে বাবুনগরীর পারিবারিক কবরস্থানে। পরে সিদ্ধান্ত হয় হাটহাজারী মাদ্রাসা কবরস্থানে বাবুনগরীকে শায়িত করা হবে। এ নিয়ে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত বদল হয়। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয়েছে জুনায়েদ বাবুনগরীর দাফন হবে ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রামে।
৬৮ বছর বয়সি দেশের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
২০২০ সালে হেফাজতের আমির হন জুনায়েদ বাবুনগরী। আমৃত্যু তিনি এই পদে ছিলেন। এর আগে তিনি এ সংগঠনের মহাসচিব পদে ছিলেন। তখন আমির ছিলেন মরহুম আল্লামা আহমদ শফী।
বাবুনগরী হেফাজত আমিরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদেও ছিলেন।
তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ সভাপতি, চট্টগ্রাম নুরানি তালিমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এ ছাডা তিনি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক, ইনসাফ২৪কম ও কওমিভিশন.কমের প্রধান উপদেষ্টাসহ কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
একনজরে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী
আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের হাল ধরেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এর আগে তিনি হেফাজতের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ দিন। একই সাথে দেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন মহলে পরিচিত হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালক ছিলেন বাবুনগরী। তবে, হেফাজতের আমিরের নেতৃত্বের কারণে দেশ-বিদেশে তার ব্যাপক পরিচিতি পায়। বিশেষ করে হেফাজতের একটি অংশ যখন বর্তমান সরকারের সাথে সমঝোতার পক্ষ নেয়, তখন বাবুনগরীর সরকারবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।
চলতি বছর ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে হেফাজতের ডাকে দেশে হরতাল ও পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ আর হতাহতের ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতাকে। সরকারের সাথে একাধিক বৈঠক করেও সমঝোতার সুযোগ না পেয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা দেন সংগঠনটির আমির আল্লামা বাবুনগরী।
এরপর থেকে তিনি মাদ্রাসার কার্যক্রম নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অবশ্য এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরের ঘটনার পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দিন রিমান্ড ও কারাভোগ করেছেন তৎকালীন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
ব্যক্তিগত পরিচয় : জুনায়েদ বাবুনগরী ১৩৭৩ হিজরি মোতাবেক ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগরে জন্ম গ্রহণ করেন। ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট ৬৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বাবা মরহুম হযরত আল্লামা আবুল হাসান। তার স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
লেখাপড়া : পড়াশোনা- প্রাথমিক শিক্ষা আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসায়। এরপর তিনি মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন দারুল উল‚ম হাটহাজারী মাদ্রাসায়। তারপর পাকিস্তানের দারুল উলূম আল্লামা বিন্নুরি টাউন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ইলমে হাদিসে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফেরেন।
কর্মজীবন : আল্লামা কর্মজীবনের শুরুতে আজিজুল উল‚ম বাবুনগর মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। এরপর ২০০৫ সালে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদিস পদে পদোন্নতি পান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) -এর ইন্তেকালের পর তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষাসচিব পদে নিয়োগ পান।
অপরদিকে, ২০১৩ সালে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পান। পরবর্তীকালে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এর ইন্তেকালের পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতের আমির পদে মনোনীত হন তিনি।

শেয়ার করুন


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

sponser form